ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ


চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সঠিক বা স্বাভাবিক ওজন নির্ধারণ করা হয় দেহের উচ্চতার অনুপাত অনুসারে। সে তুলনায় আপনার ওজন বেশি হলে আপনি মোটা আর কম হলে চিকন বা ওজনহীন। শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফ্যাট বা চর্বি থাকলে ওজন বেড়ে যায়। খাদ্য গ্রহণের তুলনায় পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্যগুন গুলো কম খরচ করার কারণে সেসব শরীরে জমা হতে থাকে এবং দেহের ওজন বাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া মানসিক অশান্তির একটি কারণ। কেননা এটা মানবদেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। শরীরে জমে থাকা বাড়তি চর্বি যেকোন মুহূর্তে একটি রোগে রূপান্তরিত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হার্ট এটাক এর মত মরণ ব্যাধি হতে পারে। মুটিয়ে যাওয়ার কারণে একঘেয়েমি, বিষাদগ্রস্ততা, রাগ, পরিশ্রম করার অনীহা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণে অনীহার প্রবণতা বেড়ে যায়। যাইহোক, নিচের ওজন কামানোর প্রাকৃতিক ঔষধগুলো আপনাকে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

 অতিরিক্ত ওজন বাড়ার কারণঃ

নানা কারণে ওজন বেড়ে যায়। অতিরিক্ত মদ পান, বংশীয় সমস্যা, অলস জীবনযাপন, মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগা, অতিরিক্ত পানাহার, বেশি বেশি জাঙ্ক ফুড গ্রহণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অনিদ্রা, গর্বধারণ এবং কিছু ঔষধ গ্রহণের কারোনে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন বাড়ার লক্ষণঃ

অতিরিক্ত ওজন বাড়ার লক্ষণগুলো- অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করা, পিঠে ব্যাথা, হাড়ের যোগস্থলে ব্যাথা, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়া, নাক ডাকা, অনিদ্রা এবং শরীরের নানা অঙ্গ মুটিয়ে যাওয়া, যেমনঃ কোমর-ঊরুর প্রস্থ বেড়ে যাওয়া, মেয়েদের স্তন ঝুলে পড়া ইত্যাদি।

 

ওজন কামানোর ঔষধঃ

ওজন কমানোর জন্য ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এই ঔষধগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং আমাদের নিত্য দিনের ব্যবহৃত খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। তাই এসবে কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই এবং যে কেউ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এগুলো খেতে পারবেন। চলুন ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধগুলো দেখে নেই।

মধুর সাথে আদার রসঃ 

মধুর সাথে আদার রসের মিশ্রণে তৈরি ঔষধ ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। দিনে দুইবার করে এই মিশ্রণ গ্রহণ আপনাকে ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করবে। মধুতে থাকা ফলশর্করা (Fructose) যা যকৃতের চালিকা শক্তি দ্রাক্ষা-শর্করা বা গ্লুকোজ তৈরি করে এবং দেহে ওজন কমানোর হরমোনগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে আদা পরিপাক যন্ত্রের জার্মগুলো কে মেরে ফেলে, বার বার ক্ষুদা লাগা দূর করে এবং এটা মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ৩ টেবিল চামচ মধুর সাথে ২ টেবিল চামচ আদা হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন।
 

মধু এবং দারুচিনীঃ 

মধু এবং দারুচিনীর কার্যক্ষমতা বলে শেষ করা যাবে না। মধু খেতেই শুধু সুস্বাদু নয়, এটা দেহের হজমক্রিয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দারচিনী রক্তচাপকে স্থির রাখে। দেহে ওজন কমানোর হরমোনের রস বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে ওজন কমানোর বার্তা পাঠায়। দারচিনী দেহকে সক্রিয় করে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে ১ চলা দারচিনী নিয়ে চুলায় দিন। ১৫ মিনিট ফুটন্ত পানিতে রাখুন। এরপর নামিয়ে পানি ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।

লেবু, মধু এবং গোল মরিচের মিশ্রনঃ 

ওজন কমাতে লেবুর গুনাগুণ খুব প্রসিদ্ধ। লেবু, মধু এবং গোল মরিচের মিশ্রণ ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক চিকিৎসা। কেননা এসব উপাদানই রান্নাঘরে সবসময় পাওয়া যায়। লেবুতে এক ধরনের যৌগ-পদার্থ আছে সেটা বার বার ক্ষুদা লাগা দূর করে। গোল মরিচ দেহে নতুন চর্বি কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে এবং রক্তকণিকায় থাকা চর্বি কমিয়ে ফেলে। ১ গ্লাস কুসুম পানির সাথে ১ টেবিল চামচ পানি, ১ টেবিল চামচ গোল মরিচের গুঁড়া, ৪ টেবিল চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে পান করুন।

গ্রীন চাঃ 

ওজন কমাতে গ্রীন চা অনেক জনপ্রিয় এবং পরিচিত। গ্রীন চা  চায়ে অনেক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে জমে থাকা শক্ত চর্বি গলিয়ে ফেলে। চিনি ছাড়া পান করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। ওজন কমানোর জন্য দিনে ৩-৪ কাপ চা পান করবেন।

গরম পানিঃ 

এখন থেকে ঠান্ডা পানি বাদ দিয়ে গরম পানি খাওয়া শুরু করুন। গরম পানি রক্ত থেকে চর্বিগুলো বের করে ফেলে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং পরে নিয়মিত গরম পানি পান করুন। খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি পান করবেন না।

ভিনেগারঃ 

ভিনেগার বা সিরকা ওজন কমাতে দারুণ কার্যকরী। লেবুর মত ভিনেগারও রক্তকণিকায় থাকা চর্বি দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটা দেহের চর্বি কোষগুলোকে মেরে ফেলে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ভিনেগারের সাথে লেবুর রস যোগ করলে সেটার কার্যকারিতা বাড়ার পাশাপাশি স্বাদও বাড়িয়ে দেয়। এক গ্লাস পানির সাথে ১ টেবিল চামচ ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিনে ২ বার পান করুন।

কপি জাতীয় সবজিঃ 

ওজন কমানোর খাদ্য তালিকায় ফলমূল এবং শাকসবজির স্থান সবার উপরে। সবজির মধ্যে কপি জাতীয় সবজি সব চেয়ে বেশি কার্যকরী। দৈনন্দিন খাদ্যে নিয়মিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি রাখুন। সালাদের মধ্যেও ফুলকপি কুচি করে দিতে পারেন। এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং খুব সামান্য ক্যালরি আছে। এতে থাকা টারটারিক এসিড চিনি এবং কার্বহাইড্রেডকে চর্বিতে রূপান্তরিত হতে দেয় না। কপিতে থাকা ভিটামিন এ এবং সি হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সাড়াতে খুব কার্যকরী।

শসাঃ 

শসা দেহের চর্বি কমাতে অনেক পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ একটু ঔষধ। একটি শসায় ৯০ শতাংশ পানি এবং ১৩.২৫ ক্যালরি থাকে। যা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং তরল পদার্থের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়। শসায় থেকে ভিটামিন এ, সি এবং ই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং সুস্থ সবল রাখে।

লাউ জাতীয় সবজিঃ 

লাউয়ে পুরোটাই ফাইবার এবং পানি দিয়ে ভরা। এতে সামান্য ফ্যাটও নেই। এটা অনেকক্ষণ পেটকে ভরিয়ে রাখে ফলে তাড়াতাড়ি ক্ষুদা লাগে না। তরকারিতে নিয়মিত লাউ খাওয়ার পাশাপাশি লাউয়ের জুস করেও খেতে পারেন।

জিনসেংঃ 

জিনসেং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। চীনে ওজন কমানোর ঔষধ হিসেবে এটা অনেক জনপ্রিয়। বাজারে জিনসেংয়ের চা পাওয়া যায়। এটা শরীরে জমে থাকা চর্বিগুলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং নতুন করে কোন চর্বি কোষ জমতে দেয় নায়। জিনসেং সেবন করার সব চেয়ে ভাল উপায় হল গরম পানির  সাথে লেবু এবং মধু মিশিয়ে। ১ টেবিল চামচ জিনসেংয়ের সাথে এক কাপ পানি এবং পরিমাণ মত লেবু এবং মধু মিশিয়ে চায়ের মত করে দিনে ২ বার পান করুন।

 উপরের ওজন কমানোর ঔষধগুলো নিয়মিত গ্রহণ করার পাশাপাশি সাথে ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। ঔষধগুলো দ্রুত কার্যকরী করতে ক্যালরি হিসেব করে খাবেন এবং আপনার পক্ষে যত বেশি সম্ভব পানি খাবেন। মনে রাখবেন ১০ দিন বা এক মাসে আপনার ওজন বাড়েনি, তাই এটা এত তাড়াতাড়িও কমবে না।
Share:

0 comments:

Post a Comment