লজ্জ্বাবতী (ঔষধি গাছ) এর গুণাগুন



লজ্জাবতী তবে অন্য নাম লাজুক লতা। ইহা বর্ষজীবি গুল্ম আগাছা বা ওষুধী জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড লতানো এবংশাখা প্রশাখায় ভরা। ইহা কাঁটাযুক্ত ও লালচে রঙের। কিছুটা শক্ত। সহজে ভাঙ্গে না বরং পেচিয়ে টানলে ছিড়ে যায়।

 গাছের পাতা যেীগিক পত্র। কয়েক জোড়া পাতা বিপ্রতীপভাবে থাকে। অনেকটা তেতুল পাতার মত। হাত ও পায়ের স্পর্শে লজ্জ্বাবতীর পাতা বুঁজে এসে বন্ধ হয়ে যায়। পাতা সরু ও লম্বাটে, সংখ্যায় ২ থেকে ২০ জোড়া। উপপত্র কাঁটায় ভরা।

এর ফুল উভলিঙ্গ। বৃতির সংখ্যা ৪ টি, পাপড়ি ৪টি, ফুল গুলি বেগুনী ও গোলাপী রঙের।

এর ফল দেখতে চ্যাপ্টা এবং একত্রিত। মে থেকে জুন মাসে ফুল আসে, জুলাই আগষ্টে ফুল থেকে ফল হয় এবং জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে বীজ থেকে চারা গজায়।

উপকারী অংশ

পাতা ও মুল। পাতায় এ্যাকোলয়েড ও এড্রেনালিন এর সব উপকরণ থাকে। এছাড়ও (turgorins) টিউগুরিনস্ এবং মুলে ট্যানিন থাকে।

ব্যবহার

হাত-পা জ্বালা :  লজ্জাবতীর গাছ মূল পাতা ১০ গ্রাম ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেবন করলে উপকারে লাগে।

অর্শ্ব রোগ: গাছ ও মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ এক কাপ দুধ ও তিন কাপ পানি এক সঙ্গে মিশিয়ে একত্রে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রত্যেক দিন সকাল-বিকেল দু’বার খেতে হবে।

নাড়ি সরে আসা: বহু প্রসূতি সন্তান প্রসবের সময় ধাত্রীর অসাবধানতায় নাড়ি সরে যায়, উঁচু হয়ে বসতে গেলে অস্বস্তিবোধ করে। এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর ১০ গ্রাম আন্দাজ গাছপাতা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে এটা প্রতিদিন সকাল-বিকেল দু’বার খেলে ঠিক হয়ে যাবে।

আমাশয়: লজ্জাবতীর ডাঁটা পাতা মিলিয়ে ১০ গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে খেতে হবে। আর যাদের আমযুক্ত গাঁজলা দাস্ত হয়, তারা শুধু পাঁচ বা ছয় গ্রাম সিদ্ধ করে ছেঁকে ওই পানি খেলে উপকার পাবেন।

ঘামের দুর্গন্ধ: অনেকের ঘামে দুর্গন্ধ হয়। এক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের ডাঁটা ও পাতার ক্বাথ তৈরি করে বগল ও শরীর মাখতে হবে। তাহলে এ অসুবিধা দূর হবে।

যৌনি ক্ষতে:  যনিপথে ক্ষত হলে, প্রথমিক স্তরে মাঝে মাঝে অথবা প্রায় রোজই অল্প স্রাব চলতে থাকে, একটা আশটে গন্ধ, কখনো বা একটু লালচে স্রাব হয়, এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাবধান করে থাকেন, এর পরিনামে ক্যান্সার হতে পারে। এক্ষেত্রে দুধ-জলে সিদ্ধ করা লজ্জাবতীর কাথ দিনে ২ বার খেলে এ রোগ উপশম হয়। একই সাথে লজ্জাবতীর ক্বাথ দিয়ে ডুশ দিলে বা যোনিপথ ধুলে তাড়াতাড়ি ক্ষত সেরে যায়।

রমনে অতৃপ্তি: কয়েকটি সন্তান হওয়ার পর প্রসবদ্বারের শৈথিল্য হয়েছে , সেটার অনেকটা মেরামত করে দিয়ে থাকে এ লজ্জাবতীর ক্বাথের ডুশ নেওয়ায়, আর গাছের পাতা সিদ্ধ ক্বাথ দিয়ে তৈরি তেলে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পিচুধারণ কারালে এছাড়া অন্ডকোষের পানি জমা সারাতে পাতার পেস্ট ব্যবহার করা হয়।

আমাশয়: ১০ গ্রাম লজ্জাবতীর ডাঁটা ও পাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এ ক্বাথ খেলে অবশ্যই উপকার পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য: মূল ৭ /৮ গ্রাম থেঁতো করে সিদ্ধ করতে হবে এবং ছেঁকে ঐ পানিটা খেতে হবে। তাহলে উপকার হবে।
আমাদের দাতেঁর মাড়ির ক্ষত সাড়াতে গাছসহ পনের থেকে বিশ সে.মি. লম্বা মূল পাণিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা  দিন তিন বার কুলকুচা করলে ভালো হয়। সাদা ফুলের লজ্জ্বাবতীর পাতা ও মুল পিষে রস বের করে নিয়মিত খেলে পাইলস্ ও ফিস্টুলায় আরাম পাওয়া যায়।
Share:

0 comments:

Post a Comment